সমন্বয় দাখিলা / Adjusting entry

জনাব রফিক সাহেব লাভের আশায় ৫০,০০০টাকা মূলধন হিসেবে দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। তো হিসাবকাল শেষে সকল আয় এবং ব্যয় হিসাব করার পর সে দেখলেন তার ব্যবসায়ের নীট ক্ষতি (সকল ব্যয় যখন আয় থেকে বড় হয়) হয়েছে ২০০০টাকা, যা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তাই তিনি আয় বিবরণী (Financial statement) অনুসন্ধান করে দেখলেন ভাড়া ব্যয় ৮,০০০টাকা, যেখানে অগ্রিম ভাড়া বাবদ ২০০০টাকা বাদ দেয়া হয়নি, যা পরবর্তী বছরের। তাই প্রকৃত ভাড়া ব্যয় হবে ৬০০০ টাকা। এটি সমন্বয় করার পর তার ব্যবসায়ে নীট লাভ ( সকল আয় যখন সকল ব্যয় থেকে বেশি হয়) হয়েছে ২০০০ টাকা।
সুতরাং এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক চিত্র জানতে হলে আয় ও ব্যয় গুলোর সঠিক সমন্বয় প্রয়োজন।

সমন্বয় জাবেদা\দাখিলা:

সমন্বয় দাখিলা। 'সমন্বয়' এবং 'দাখিলা' শব্দের একত্রিত রূপ সহজ অর্থে, সমন্বয় হল কোনো বিষয়ের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয়ের প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি। অর্থাৎ সমন্বয় হল কোনো হিসাব বা লেনদেনের সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ বা বিয়োগ করা। আর দাখিলা মানে হচ্ছে লিপিবদ্ধ অর্থাৎ কোনো দ্বৈতসত্তা বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়পূর্বক জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা। সুতরাং বলা যায়, কোনো নির্দিষ্ট হিসাবকালে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য যেসব বিষয়ের যোগ-বিয়োগের প্রয়োজন হয়, ওইসব বিষয়ের জন্য প্রয়োজনীয় দাখিলা প্রদানকে সমন্ব্য় দাখিলা বলে।
যদি একটু সহজভাবে চিন্তা করি, রেওয়ামিল প্রস্তুতের পর একটি নির্দিষ্ট রেওয়ামিল প্রস্তুতের পর একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের বকেয়া ও অগ্রিম আয় ব্যয় গুলো সমন্বয় করতে যে দাখিলা দেয়া হয় তাই সমন্বয় জাবেদা/দাখিলা।

গত আলোচনায় আমরা যে হিসাবচক্রের একটি নকশা দেখেছিলাম সে অনুযায়ী সমন্বয় দাখিলা হল হিসাবচক্রের ৫ম ধাপ।অর্থাৎ,রেওয়ামিল প্রস্তুতের পরপরই আমাদের সমন্বয় জাবেদা করতে হয়। অর্থাৎ রেওয়ামিল প্রস্তুতের পর হিসাবকাল শেষে কিছু অগ্রীম এবং বকেয়া হয়ে থাকে। কিছু হিসাবের মেয়াদ আগামী বছরে থাকে এবং কিছু হিসাব পূর্ববর্তী বছরের বকেয়া হয়ে থাকে। ব্যবসায়ের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা এবং লাভ-ক্ষতি বের করার জন্য এগুলোকে সমন্বয় করতে হয়। কারণ, এগুলো সমন্বয় না করা হলে যে বছরের লেনদেনগুলোকে হিসাবের আওতায় এনে আয়-ব্যয় অথবা সম্পদ হিসেবে এন্ট্রি করা হবে,সেগুলোর সাথে ওইসব অগ্রীম ও বকেয়া হিসাব যুক্ত হয়ে গড়মিল সৃষ্টি করবে। অর্থাৎ,প্রকৃত অবস্থা এবং লাভ হল না ক্ষতি হল তা সঠিকভাবে দেখাবে না। তাই সঠিক ফলাফল পেতে সমন্বয় জাবেদা করা অতীব জরুরী। ধারণাটি পরিষ্কার করার জন্য উপরের উদাহরণ টি দেখতে পারেন।
প্রয়োজনীয়তা:
 ১. হিসাবকাল ধারণা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়কালের আয় থেকে ওই সময়ের ব্যয় বাদ দিয়ে কারবারের আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করা হয়। সেক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের সংগে সম্পর্কযুক্ত কিছু বিষয়ের যোগ-বিয়োগের লক্ষ্যে সমন্বয় দাখিলা প্রয়োজন হয়।
২. বকেয়া ধারণা অনুযায়ী, নগদ লেনদেনের পাশাপাশি বকেয়া লেনদেনগুলোকে ও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে হয়। আর এ বকেয়া লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন হয় সমন্বয় দাখিলার।
৩.নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ফলাফল জানতে চায়। তাই ফলাফল নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট মুনাফা জাতীয় আয়-ব্যয়ের প্রকৃত পরিমাণ এবং তা নির্ণয় সম্ভব হয় সমন্বয় দাখিলার মাধ্যমে।
৪.উদ্বৃত্তপত্র(balance sheet) প্রস্তুতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানা যায়।উদ্বৃত্তপত্রে সম্পদ, দায় ও মূলধনের পরিমাণ সঠিক অংকে পরিমান অংকে পরিণত করা যায় সমন্বয় দাখিলা একান্ত প্রয়োজন।

সমন্বয় দাখিলা মূলত অগ্রিম ও বকেয়া আয়-ব্যয় নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ যে মাসের বা বছরের হিসাব বের করা হয়, শুধুমাত্র সে বছরের আয় ও ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সমন্বয় দাখিলা করা হয়। সমন্বয় গুলো সাধারণত প্রশ্নাকারে রেওয়ামিলের পরে দেয়া থাকে। যেসব আয়-ব্যয়ের সমন্বয় দেয়া থাকে,তা রেওয়ামিলের হিসাবের সাথে সমন্বয় করে এরপর দাখিলা করা হয়। যেমন মনে করি, রেওয়ামিলে দেওয়া আছে অগ্রীম বিমা ২৪০০ টাকা। ওদিকে আবার সমন্বয়ে বলা আছে এটি ২ বছরের জন্য। কিন্তু আমরা হিসাব করছি ১ মাসের তবে কি সমন্বয় জাবেদায় এই ২৪০০টাকায় হবে? না, কারণ, এখানে স্পষ্ট বলা আছে,অগ্রীম বিমা(২৪০০) টাকা ২ বছরের জন্য।কিন্তু আমরা এক মাসের জন্য মাসের শেষের দিন হিসাবটি করছি।তাহলে সে মাসে কি আমার পুরো ২৪০০টাকার সুবিধা আমি পেয়েছি বা খরচ হয়েছে। না, যেহেতু ১ মাসের জন্য হিসাব করা হচ্ছে তাই (২৪০০÷২৪)=১০০ টাকা হবে। ২৪ দিয়ে ভাগ করা হয়েছে কারণ ২৪মাস= ২বছর। সুতরাং, ১ মাসের খরচ হচ্ছে ১০০টাকা। তাই জাবেদাটি হবে- বীমা খরচ(Insurance expense)১০০
                   অগ্রীম বিমা (prepaid insurance)১০০

এইভাবেই সমন্বয়গুলোর মাধ্যমে পুনরায় সমন্বয় জাবেদা লিখা হয়। এবং এরপরে হিসাবচক্রের ধারাবাহিকতা অনুসারে আবারো খতিয়ান করতে হয় ( সমন্বিত খতিয়ান), একইভাবে সসমন্বিত রেওয়ামিল করা হয়।
বকেয়া খরচ(Outstanding-unpaid expense):
বর্তমান বছরের খরচ যদি পরিশোধিত না হয় তাহলে ঐ খরচ বাদেই লাভ-ক্ষতি হিসাব তৈরী করলে তা প্রকৃত লাভ-ক্ষতি প্রদর্শন করবে না। যেমন-বকেয়া বেতন, বকেয়া বাড়ি ভাড়া। এ বকেয়া খরচ লাভ-ক্ষতি হিসাবের সংশ্লিষ্ট খরচের সাথে যোগ হবে এবং উদ্বৃতপত্ত্রের দায় পাশে লিখতে হবে।
Example : Utility expense incurred but not paid during following the month $250
       Journal : Utility expense 250
                     Utility payable 250
প্রাপ্য/বকেয়া আয়(Accrued Income):
এমন কিছু আয় থাকে যা ব্যবসায়ী হিসাব সনে নগদে নাও পেতে পারেন কিন্তু পরবর্তীতে অবশ্যই পাবেন। এমন আয়কে হিসাবে না আনলে প্রকৃত হিসাব খাতকে ক্রেডিট করে বকেয়া হিসাবকে ডেবিট করতে হয়। দু'তরফা দাখিলার জন্য একে সম্পত্তি পাশে দেখাতে হবে।
Example: Service performed for other customers but not paid(accrued) $500
         Journal: Accounts receivable 500
                       Service revenue 500
অগ্রীম খরচ(Prepaid expense):
ব্যবসায়ে এমন অনেক খরচ আছে যার ফল পরবর্তীতে পাওওয়া যেতে পারে। আবার সংশ্লিষ্ট বছরে এর ফল অংশ বিশেষও পাওয়া যেতে পারে। যেমন- বছরের মাঝামাঝিতে বীমার প্রিমিয়াম বাব্দ ১০,০০০টাকা দেয়া হল। ফলে পাওয়া গেল অর্ধেক। তাহলে ৫০০০টাকার অগ্রীম খরচ হল। আবার বেতনাদি বা অন্যান্য খরচ অগ্রীম করতে হতে পারে যা বর্তমান বছরে দেখালে সঠিক লাভ-ক্ষতি দেখানো হবে না। তাই ঐ অগ্রীম খরচের অর্থ দিয়ে সংশ্লিষ্ট খরচের হিসাবকে ক্রেডিট করতে হবে এবং ঐ অর্থ উদ্বৃপত্রের সম্পত্তি পাশে দেখাতে হবে।
    Example: prepaid Insurance = $3,600
Prepaid insurance is the cost of a 2 years insurance policy, effective the following month
               Journal: Insurance expense 150
                         Prepaid insurance 150
                {($3,600÷24)=$150 per month}

আশা করি পাঠকগণ সমন্বয় দাখিলার আলোচিত বিষয়বস্তু বুঝতে পেরেছেন। অতি সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। যদি কোনো ভুল-ত্রুটি হয় তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ এই পর্যন্তই, সবার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে বিদায় নিচ্ছি।
আসসালামু আলাইকুম ।


মির্জা গোলাম ফাত্তাহ
অর্থনীতি বিভাগ (স্নাতক ২য় বর্ষ)
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.