ব্যবস্থাপনা / Management
ব্যবস্থাপনা
মানুষ সামাজিক জীব।ছোটবেলা থেকেই মানুষ একটি সমাজে বসবাস করে।সামাজিক বিভিন্ন প্রথা,নিয়মনীতি,বিধিনিষেধ যদিও ছোটবেলায় মানুষের কাছে অনেক জটিল তবু্ও মানুষ নিজের অজান্তেই তা বুঝে ফেলে।মানুষ যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে তখন সে উপলব্ধি করতে পারে যে, কোনটা করা উচিত এবং কোনটা করা উচিত না। পাঠকরা নিশ্চয়ই ভাবছেন ব্যবস্থাপনার সাথে আবার এসবের সম্পর্ক কি?
আমরা যদি ব্যবস্থাপনার সঙ্গা অথবা ব্যাবস্থাপনা কি জানতে পারি এবং গভীরভাবে চিন্তা করি তাহলেই আমরা বুঝব আমরা সকলেই ব্যবস্থাপনার ভিতরেই আবদ্ধ আছি।
এখন আসা যাক মূল আলোচনায়,মনে করি করিম ৪ লক্ষ টাকা মুলধন নিয়ে “বাটা শুজ” নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে করিম মুলধন বিনিয়োগ করে যে ব্যবসাটি স্থাপন করল, এখানে কিন্তু সে অবশ্যই ব্যবসায়ের ধরন, ব্যবসায়ের প্রকৃতি,উদ্দেশ্য আরও নানানকিছু সে আগে থেকেই আগাম মনস্থির করেছিল। হ্যাঁ, এখানে পরিকল্পনার কথায় বলা হয়েছে। সহজভাষায় পরিকল্পনা হচ্ছে, কখন কি করতে হবে,কিভাবে করতে হবে, তার আগাম চিন্তা ভাবনা।এজন্য পরিকল্পনাকে বলা হয় নীল নকশা বা ইংরেজিতে বলা হয় ব্লু প্রিন্ট(Blue print).যার মধ্যে ব্যবসায়ের মুল কাঠামোগুলো উপস্থাপন করা হয়। এককথায় ব্যবসাটি আসলে কি রুপ তা বুঝা যায়। ব্যবস্থাপনার ৫টি কাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এটি। অর্থাৎ করিম পরিকল্পিত ভাবে ব্যবসাটি স্থাপন করার পর কিছুদিনের মাথায়ই কিছু জিনিসের অভাববোধ করা শুরু করল এবং ভাবলো যে আমাকে আমার লক্ষ্য অর্জনের জন্য এখন সংগঠিত করা প্রয়োজন। সংগঠিতকরণ বলতে বুঝায় যে সম্পদ কিভাবে বণ্টিত হবে তা ঠিক করা এবং সে অনুযায়ী বণ্টন করা। সে যথারীতি সংগঠিতকরণের কাজটি সম্পন্ন করল।
আবারও সে কিছুদিন যেতে না যেতেই সে ভাবলো এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তার ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কিছু জনবল প্রয়োজন। হ্যাঁ, আমি ব্যবস্থাপনার তৃতীয় কাজটির কথা বলছি, যা হছে কর্মীসংস্থান। এবার সে যথারীতি কর্মী সংগ্রহ করে,দক্ষ কিছু কর্মী নিয়োগ দেয়৷ কর্মীনিয়োগের পরে ধারাবাহিকভাবে সে তাদের দায়িত্ব এবং কাজ সম্পর্কে অবগত করেন এবং তাদের নেতৃত্ব প্রদান করল। এই নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে সে ব্যবস্থাপনার ৪নম্বর কাজটি শেষ করল।এরপর সে তার প্রতিষ্ঠানের গুনগত ও যাবাতীয় কার্যাবলি সঠিকভাবে সম্পাদন হচ্ছে কিনা তা তদারকি করল। অর্থাৎ সে ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ কাজ নিয়ন্ত্রণ এর কাজটি করল। বইয়ের ভাষায় নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে গৃহীত নীতি অনুযায়ী কার্য পরিচালনা হচ্ছে কিনা তার পরিক্ষা করা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য ব্যবস্থাপনার মৌলিক কাজগুলোর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ অন্যতম।
ইতোমধ্যেই করিম তার ব্যবসায়ের ব্যবস্থাপনার ৫টি মৌলিক কাজ গুলো সম্পন্ন করেছে অর্থাৎ সে যেসমস্ত কাজগুলোর অভাববোধ করেছিল তা ধারাবাহিকভাবে সে তার ব্যবসায়ে প্রতিফলন ঘটিয়েছে।এছাড়াও অনেক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপনার মৌলিক কাজগুলোকে কেউ ৭ ভাগে, কেউ ১০ ভাগে আলাদা আলাদা ভাবে বিভক্ত করেছেন। আমার আলোচনায় মূল এই ৫টি কাজের ভিতরে এবং বাইরেও অনেক নিয়ম-নীতি রয়েছে।যার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেয়ল।
তুরস্কের এই ব্যবস্থাপনাবিদ ছিলেন একজন খনি প্রকৌশলী ও খনির পরিচালক। তিনি ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ের ওপর সাধারণ তত্ত্বের উন্নয়ন সাধন করছেন। পরবর্তীকালে তিনি ও তার সহকর্মীবৃন্দ বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার ধারণায় তিনিই সবচেয়ে প্রভাববিস্তার ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। তিনি তার সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী আধুনিক পরিচালনার ধারণা সরবরাহ করেছিলেন এবং তিনি পরিচালনার ১৪টি মূলনীতি এবং পরিচালনার ৫টি কার্যকারীর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৩০ সালে সে ”Industrial and General Administration” নামে তার উল্লেখযোগ্য বইটি প্রকাশ করেন। আধুনিক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এই ব্যবস্থাপনাবিদ তার বিভিন্ন বই এবং বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে মানুষকে একটি প্রতিষ্ঠান চালনা সম্পর্কে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে।
ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ধারণা আরও সূদৃয় করার জন্য এবং মানুষকে বৈজ্ঞানিক ব্যখা দেওয়ার জন্য যুক্তরােস্ট্রর বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক এফ.ডব্লিউ .টেইলর এর ভুমিকাও কোনো অংশে কম না।
অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী টেইলর কার্যক্ষেত্রে প্রবেশ এর পর স্বীয় কর্মদক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার বলে কর্মনায়ক থেকে শুরু করে নানা পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং মাত্র ২৮ বছর বয়সে মিডভেল স্টীল কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলীর পদ অলংকৃত করেন।কোম্পানিতে কাজ করার সময় তার কাছে নানা সমস্যা ধরা পড়ে। বিশেষকরে শ্রমিকরা তাদের উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় সামান্যই উৎপাদন করে বলে তার নিকট প্রতিয়মান হয়। তখন সে উক্ত সমস্যা গুলি চিহ্নিত করে সমাধানের পন্থা বের করার জন্য গবেষণা করেন এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে তথ্য অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করে তা প্রয়োগ করেন। এভাবেই সে তার গবেষণা ও কর্মের বলে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হল “Principles of Scientific Management”.
পাঠকদের মনে হয়ত ১টি প্রশ্ন জাগতে পারে যে, ব্যবস্থাপনার সাথে অর্থনীতির কি সম্পর্ক? আদৌ কি কোনো সম্পর্ক আছে?
আমরা নিশ্চয়ই জানি যে অর্থনীতি পণ্য ও কৃেত্যর উৎপাদন,সরবরাহ,বিনিময়,বিতরণ এবং ভোগ ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে থাকে। এই কাজগুলো সুশৃংখল ও গ্রহনযোগ্য করে তোলার জন্য যে গাইডলাইনের প্রয়োজন হয় তার অধিকাংশই ব্যবস্থাপনার মধ্যেই নিহিত। ব্যবস্থাপনা সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষণে বিশেষকরে ব্যবসায়ী ফার্মসমূহ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। ইহা পরিমানগত পদ্ধতি যেমন গবেষণা কার্যক্রম ও প্রোগামিং এবং পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি যা সংশ্লেষাংক বিশ্লেষণ কোনো ঝুঁকি ছাড়াই ও সঠিক প্রক্রিয়ায় তুলে ধরতে পারে। একটি ভাল ধারণা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সফলের সাথে সাথে উৎপাদন খরচ সর্বনিম্নকরণ, মুনাফা সর্বোচ্চকরণ,ফার্মের উদ্দেশ্য এবং প্রযুক্তি ও বাজার পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে উৎপাদন পদ্ধতি নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, একটি প্রতিষ্ঠান তার কাংখিত উদ্দেশ্যে পৌছানোর জন্য অথবা কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন আর্দশ ব্যবস্থাপনা
প্রিয় পাঠক, লেখাটি পড়ে আপনাদের মনে যদি কোনো প্রশ্ন জাগে,তাহলে অনুগ্রহপূর্বক কমেন্ট বক্সে তা জানাবেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব তা উত্তর দেওয়ার জন্য।
সকলকে আমাদের পাশে থাকার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
আজ এ পর্যন্তই, সবার সুস্থতা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
অর্থনীতি বিভাগ(স্নাতক ২য় বর্ষ)
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
No comments