Journal/জাবেদা


Journal/জাবেদা

ওয়াও! ছবিটি সুন্দর হয়েছে তো এই ছবিটি সেইভ করে রেখে দাও অথবা সংরক্ষণ করো কারণ, মানুষ প্রতিনিয়ত চাই যে তার সুন্দর গুরুত্বপূর্ণ  মুহূর্তগুলো ধরে রাখার জন্যএকসময় হয়ত বা সে এগুলোর অভাববোধ করবে অথবা সে হয়ত এই ছবিটি রাখার কারণে কোনো সুবিধা পেতে পারে অথবা ছবিটি না থাকার কারনে কোনো সুবিধা থেকে বঞ্চিতও হতে পারে
জাবেদা ব্যপারটিও অনেকাংশে তেমনই অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য কিছু ঘটনা বা মুহূর্ত ধরে রাখা বা সংরক্ষণ করে রাখাই হল জাবেদাঅনেকেই হয়তবা ভাবতে পারেন যে অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য কথাটি কেন বললাম৷ কারণ হিসাববিজ্ঞানের নীতি অনুযায়ী আর্থিক কোনো কার্যক্রম সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ প্রস্তাবিত হয়েছে অথবা ব্যবসায়ে এর কোনো প্রভাব পড়েনি এমন কোনোকিছু লেনদেন বলা যাবেনা,  সেটি শুধু ঘটনা মাত্রআর আর্থিক কোনো কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে,আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সহ ব্যবসায়ে এর প্রভাব পড়েছে সেটি হচ্ছে লেনদেনতার মানে আমরা বুঝতে পারি যেপ্রতে্যক লেনদেনই ঘটনা কিন্তু প্রতে্যক ঘটনা লেনদেন নয় কোনো লেনদেন সংঘটিত হলেই প্রাথমিক পর্যায়ে তা জাবেদা বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়
জাবেদা আসলে কি? এর উদ্দেশ্য ?
হিসাবনিকাশের  যে প্রাথমিক বইতে দৈনন্দিন সংঘটিত লেনদেনসমূহ চিহ্নিত করে ডেবিট ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে তারিখের ক্রমানুসারে প্রতিদিন লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে জাবেদা বলেঅন্যভাবে, লেনদেন সংঘটিত হওয়ার পর তা চিহ্নিত করে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির নীতি অনুযায়ী ডেবিট ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে সর্বপ্রথম যে বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় সেটিই জাবেদা বই নামে পরিচিতইংরেজি 'Journal' শব্দটি ফরাসী 'Jour' শব্দ থেকে এসেছেএই ‘Jour’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে দিবসদৈনন্দিন লেনদেনগুলো প্রতিদিন এই বহিতে লেখা হয় বলে এর নাম Journal বা জাবেদাজাবেদার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লেনদেনসমূহের হিসাব তারিখ অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে লিখে রাখা এবং পরে এই বই হতে লেনদেনসমূহের হিসাব স্থায়ী পাকাপাকিভাবে পরের ধার অর্থাৎ খতিয়ানে স্থানান্তর করাশুধু তাই নয় জাবেদা করার মাধ্যমে লেনদেনের খুটিনাটি ভুল-ত্রুটিও ধরা পড়েলেনদেন সংঘটিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম এই বইতে লিখা হয় জন্যে জাবেদাকে হিসাবের প্রাথমিক বই বলা হয়হিসাবের প্রাথমিক বই ছাড়াও জাবেদা বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমনঃ মৌলিক হিসাব বই, সাহায্যকারী হিসাব বই, দৈনিক হিসাব বই, ধারাবাহিক হিসাব বই ইত্যাদি
অর্থাৎ আশা করি পাঠকগণ এইটুকু বুঝতে পেরেছেন যে কেবলমাত্র লেনদেন সম্পন্ন হলে এবং সেটির মাধ্যমে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেই তা জাবেদা বহিতে লিপিবদ্ধ করা সম্ভবহিসাবচক্রের পরবর্তী ধাপগুলো নির্ভুল সঠিক বিশ্লেষণ করার জন্য জাবেদার ভুমিকা অপরিসীমহিসাবচক্রের প্রতে্যকটি ধাপ একটি অন্যটির সাথে সম্পৃক্ত ৫তলা একটি বিল্ডিংয়ে কেউ সরাসরি যেমন ৫তলায় উঠতে পারবেনা,ঠিক তেমনি হিসাবচক্রেও কেউ সরাসরি জাবেদা থেকে রেওয়ামিলে(হিসাবচক্রের ধাপ) যেতে পারবেনাহিসাবচক্রের মুল বিষয় নিচের একটি চিত্র দেখেই আপনারা আশা করি  বুঝতে সক্ষম হবেন

কোনো লেনদেন সংঘটিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম তা জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়দৈনন্দিন লেনদেনসমুহ ধারাবাহিকভাবে দ্বৈতসত্তা বিশ্লেষণ করে,প্রতে্যকটি লেনদেনের ব্যখা দিয়ে নির্দিষ্ট ছকে তা লিপিবদ্ধ করতে হয় জাবেদায় সাধারণত দুটি পক্ষ থাকে, একটি পক্ষকে ডেবিট অন্য পক্ষকে ক্রেডিট বলা হয়কয়েকটি উদাহরণ এর মাধ্যমে চলুন ধারণাটি একটু পরিস্কার করা যাক-
1.  করিম রহিমকে ২০০০ টাকা দিল
এখানে, রহিম হবে ডেবিট
    করিম হবে ক্রেডিট
এখানে,উল্লেখ্য রহিম সুবিধা বা মূল্য গ্রহনকারী এবং করিম প্রদানকারীসূত্র অনুযায়ী সুবিধা বা মূল্য গ্রহনকারী হবে ডেবিট এবং সুবিধা প্রদানকারী হবে ক্রেডিট
2.  ব্যবসায়ের জন্য ২০,০০০টাকার আসবাবপত্র ক্রয়
এখানে, আসবাবপত্র(সম্পদ) হবে ডেবিট
         নগদ(সম্পদ) হবে ক্রেডিট
উল্লেখ্য আসবাবপত্র এবং নগদ টাকা দুটোই সম্পদ সূত্র অনুযায়ী ব্যবসায়ে সম্পত্তি আসলে ডেবিট এবং বিপরীতে সম্পদ চলে গেলে ক্রেডিট
3.  কর্মচারীকে বেতন প্রদান ৪০০০ টাকা
এখানে, বেতন(খরচ) হবে ডেবিট
        নগদ হবে ক্রেডিট
অর্থাৎ, বেতন প্রদানের ফলে ব্যয় হয়েছেসূত্রানুযায়ী ব্যয় বা ক্ষতি হলে ডেবিট অপরদিকে আয় বা লাভ হলে ক্রেডিট
নিচে বিষয়বস্তু গুলো একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হল





জাবেদা হিসাব বহিতে নির্দিষ্ট ছকের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করতে হয়জাবেদার জন্য নির্দিষ্ট যে ছক রয়েছে সেখানে ঘর সংখ্যা রয়েছে
এখানে,
তারিখঃ জাবেদার ছকের প্রথম ঘরে লেনদেনের তারিখ লিখতে হবে তারিখের ঘরে বছর,মাস দিন উল্লেখ করতে হবে
বিবরণঃ লেনদেনের সংশ্লিষ্ট দুটি হিসাবখাত নির্ণয় করতে হবে এবং তাদের বিবরণ ঘরে লিখতে হবেযেমনঃব্যংকে হিসাব খোলা হল ৫০০০ টাকা জমা দিয়ে                   1.ব্যংক হিসাব
                       2.নগদান হিসাব
এখানে,ব্যংক নগদান হচ্ছে দুটি  হিসাবখাত এবং বিবরণ ঘরে ডেবিট ক্রেডিট লিখার পর নিম্নে বন্ধনীর মধ্যে লেনদেনের ব্যখা লিখতে হয়
খতিয়ান পৃষ্ঠাঃজাবেদাভুক্ত হিসাবখাত দুটি খতিয়ানের যে পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে তা ছকের ৩য় ঘরে লিখতে হয়প্রয়োজনে খতিয়ান পৃষ্ঠার নম্বর অনুযায়ী লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়
ডেবিট ক্রেডিট টাকাঃ একটি লেনদেনে যে পক্ষ ডেবিট হবে সেই লেনদেনের নির্দিষ্ট অর্থ ডেবিট এর ঘরে এবং যে পক্ষ ক্রেডিট হবে সমপরিমাণ অর্থ ক্রেডিটের ঘরে স্থানান্তর করতে হবে
আশা করি, পাঠকগণ জাবেদার ছকের বিষয়বস্তু বুঝতে পেরেছেনতবে আরো কিছু ছোট-খাটো বিষয় রয়েছে যা জাবেদা করার সময় আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন
Ø নগদ টাকা, যন্ত্রপাতি পন্য নিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করা হলে নগদান হিসাব,যন্ত্রপাতি হিসাব ক্রয় হিসাব ডেবিট এবং মোট টাকার পরিমাণ মূলধন নামে ক্রেডিট হবে
Ø ক্রয় অথবা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যদি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ থাকে কিন্তু নগদে বা বাকীতে তা বলা না থাকে তাহলে উক্ত ক্রয় বিক্রয় বাকীতে সংঘটিত হয়েছে মনে করতে হবে
Ø বিক্রির জন্য যে সমস্ত পন্য দ্রব্য ক্রয় করা হয় সেগুলোর জন্য ক্রয় হিসাব ডেবিট হবেকিন্তু ব্যবসায়ে সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহারের জন্য ক্রয় হলে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ডেবিট হবে
Ø কোনো খরচ বা আয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নাম থাকলে তা হিসাবভুক্ত না হয়ে সংশ্লিষ্ট খরচ বা আয় হিসাব ডেবিট বা ক্রেডিট হবে
Ø চেক মারফত কোনো টাকা পাওয়া গেলে নগদান হিসাব ডেবিট করতে হবেকিন্তু চেকটি দিনই ব্যংকে জমা দিলে ব্যংক হিসাব ডেবিট হয়
Ø অফিস সরঞ্জাম যথাঃ ঘড়ি,টাইপরাইটার,ক্যাকুলেটর ইত্যাদি ক্রয় করা হলে অফিস সরঞ্জাম হিসাবে ডেবিট হবে
Ø ব্যবসায়ে মালিক যদি নিজ প্রয়োজনে অর্থ উত্তোলন করে তবে জাবেদায় উত্তোলন হবে ডেবিট এবং নগদান বা ক্রয় হবে ক্রেডিট
বি.দ্রঃ ক্রয়কৃত পন্য উত্তোলন করলে ক্রয় হবে
Ø কারো কাছে পাওনা টাকা পাওয়া যাবেনা জানা গেলে অনাদায়ী দেনা ডেবিট এবং দেনাদার হিসাব ক্রেডিট হয়
Ø ব্যবসায়ের টাকা চুরি, ছিনতাই অথবা হারিয়ে গেলে এমনকি আগুনে পুড়ে বিনষ্ট হলেও তা জাবেদায় বিবিধ ক্ষতি হিসাব ডেবিট করতে হয় এবং নগদান হিসাব ক্রেডিট করতে হয়
জাবেদার শ্রেণীবিভাগ
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বড় কিংবা ছোট উভয়ই হতে পারেআমাদের সমাজে আমরা দেখি কারো হয়ত মুদির দোকান আবার কারো শপিং কমপ্লেক্সতাই বড় যেসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে তারা লেনদেনগুলো একটি জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ না করে প্রয়োজন প্রকৃতির ভিত্তিতে বিভিন্ন বইতে লিপিবদ্ধ করার জন্য আলাদা আলাদা জাবেদা বই ব্যবহার করে এসব বড় প্রতিষ্ঠানে দৈনন্দিন লেনদেনের পরিমাণ অত্যাধিক হওয়ায় একটি জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধকরণে নানা জটিলতা দেখা দেয় এছাড়া একটি বইয়ে সকল লেনদেন থাকলে বইটি ভারী হয়ে যায় এবং ভুল-ত্রুটি এবং জালিয়াতিরও সুযোগ থাকে তাই এসবের সুবিধার্তে জাবেদা কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়
     1.বিশেষ জাবেদা
     2.প্রকৃত জাবেদা
বিশেষ জাবেদাকে আবার ৬টি ভাগে ভাগ করা হয়
.ক্রয় জাবেদা               .বিক্রয় ফেরত জাবেদা
.বিক্রয় জাবেদা              .নগদ প্রদান জাবেদা
.ক্রয় ফেরত জাবেদা          . নগদ প্রাপ্তি জাবেদা
প্রকৃত জাবেদা প্রকার
.প্রারম্ভিক জাবেদা            .সমন্বয় জাবেদা
.সমাপনী জাবেদা             .সংশোধনী জাবেদা
বড় মাঝারি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন অসংখ্য লেনদেন সংঘটিত হয় যা একটি জাবেদা বইতে একজনের পক্ষে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয় এজন্যই এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্ভুল, দ্রুত সহজ হিসাব সংরক্ষণ

প্রিয় পাঠক,আপনারা হয়তো ভাবছেন জাবেদার প্রকারভেদ গুলো কোথায়,কিভাবে এবং কোন ধরনের লেনদেনগুলো কোন ধরনের জাবেদায় লিপিবদ্ধ করব হ্যাঁ, ঠিকই আছে এটা ভাবারই বিষয়এজন্য আমি আমার পরের লেখায় সবগুলো প্রকারভেদের বর্ণনা এবং খতিয়ান সম্পর্কে আলোচনা করব
আপনারা হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর কার্যক্রমগুলো একটি হিসাবচক্র(Accounting Cycle)এর সাথে সম্পৃক্ত একজন ব্যবসায়ী লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যবসায়ে পুঁজি হিসেবে খাটিয়ে দিন শেষে(বছর শেষে) কিন্তু অবশ্যই জানতে চাইবে যে তার ব্যবসায়ে লাভ হল না ক্ষতি হল এজন্য লেনদেনগুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ, শ্রেণীবদ্ধকরণ হিসাব নিকাশের জন্য জাবেদার গুরুত্বের কোনো তুলনা হয় না

 আর বেশি বাড়াচ্ছি না, যদি জাবেদা সম্পর্কিত কোনো কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই নিচের কমেন্ট সেকশনে তা জানাবেনচেস্টা করবো উত্তর দেওয়ার জন্যভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
সকলের সুস্বাস্থ্য মঙ্গল কামনা করে এখানেই বিদায় নিচ্ছি
আসসালামু আলাইকুম



মির্জা গোলাম ফাত্তাহ্

অর্থনীতি বিভাগ(স্নাতক  ২য়বর্ষ)

পাবনা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


No comments

Powered by Blogger.