Inflation/মুদ্রাস্ফীতি
Inflation/মুদ্রাস্ফীতি
মুদ্রাস্ফীতি শব্দটার সাথে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত আছি। পরিচিত না থাকলেও কোন সমস্যা নাই। আমি ব্যাপারটা সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
ধরুন,
আপনার মাসিক আয় হয় ২০০০ টাকা, আপনি বেতন পেয়ে বাজারে গেলেন, গিয়ে দেখলেন প্রতি কেজি চালের দাম ৪০ টাকা। আপনি ৫০ কেজি চাল কিনে বাসায় ফিরলেন। আপনি প্রতি মাসেই বেতন পেয়ে অর্থাৎ ৫০ কেজি চাল কিনেই বাসায় ফেরেন।
এখানে একটু ভাবুন তো, ২০০০ টাকার ক্ষমতা আসলে কত? উত্তর হচ্ছে ৫০ কেজি চাল। আপনি ২০০০ টাকা দিলেই ৫০ কেজি চাল পেয়ে যাচ্ছেন।
পরের
কোন এক মাসে আপনি আবার বাজারে গেলেন এবং গিয়ে দেখলেন চালের কেজি ৫০ টাকা।অর্থাৎ চালের দাম কেজি প্রতি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা হয়ে গেছে। কিন্তু আপনার বেতন তো বাড়েনি, আগের মতই ২০০০ টাকাই আছে। অগত্যা আপনি ৪০ কেজি চাল কিনে বাসায় ফিরলেন।
এখন
খেয়াল করুন, আপনি আগে ২০০০ টাকা দিয়ে ৫০ কেজি চাল কিনতেন, এখন কিনছেন ৪০ কেজি। মানে আপনার ২০০০ টাকার ক্ষমতা কমে গেছে, সে এখন ১০ কেজি কম কিনতে বাধ্য করছে। অর্থাৎ সমমানের টাকায় জিনিস ক্রয়ের ক্ষেত্রে দ্রব্য কেনার পরিমাণ কমে গেল। সোজা কথায় টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেল।
ঠিক
এই জিনিসটাই হল মুদ্রাস্ফীতি।
যদি
বইয়ের ভাষায় সংজ্ঞা বলতে হয় তবে, কোন কালপরিধিতে পণ্য-সেবার মূল্য টাকার অঙ্কে বেড়ে গেলে অর্থনীতির ভাষায় তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।
অর্থাৎ সহজভাবে, কোনো কারণে কোনো জিনিসের দাম বেড়ে গেলেই তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।
দাম
বেড়ে গেলে, আসলে টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। সেকারণের আপনি আগে যেই টাকা দিয়ে ৫০ কেজি চাল কিনতেন, দাম বাড়ার কারণে এখন আপনাকে ১০ কেজি কম কিনতে হয়।
এখন
প্রশ্ন হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি ভাল নাকি খারাপ?
"মৃদু মুদ্রাস্ফীতি"
যেকোনো দেশের জন্য ভাল। কিন্তু আসলে কেন ভাল? অবাক করা বিষয়! আমি এখনই বললাম মুদ্রাস্ফীতির ফলে টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। তাহলে ভাল হয় কিভাবে? আমি আবারো বলছি "মৃদু
মুদ্রাস্ফীতি" যেকোন দেশের অর্থনীতির জন্য ভাল। "মৃদু মুদ্রাস্ফীতি"
যেকোন দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করে। কিভাবে? চলুন সহজভাবে বিষয়টাকে উপস্থাপন করা যাক।
যখন
কোনো দেশে মৃদু মুদ্রাস্ফীতি
থাকে,তখন সেই দেশের দ্রব্যাদির দাম পূর্বের তুলনায় কিছুটা হলেও বেড়ে যায়, যেই বিষয়টা আমরা উপরের চালের উদাহরণ থেকে দেখলাম। তখন সেই দেশের বিনিয়োগকারীরা
বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়। কারণ জিনিসের দাম এখন বেশি। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা এখন বেশি লাভের কথা মাথায় রেখেই বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে।
ধরুণ,
চামড়ার দাম যদি প্রতি বছর গড়ে ৫ টাকা করে বাড়তে থাকে তবে, বিনিয়োগকারীরা চামড়ার কারখানা বাড়ানো শুরু করবে এবং কারখানা বাড়ালে,মানুষ চাকরি পাবে, বেকারত্ব পাশাপাশি কমে যাবে। আমি আবারো বলছি মুদ্রাস্ফীতি
হলেই বেকারত্ব কমে যাবে। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি
হলে বিনিয়োগকারীরা
বেশি লাভের আশায় তাদের ব্যবসার প্রসার করবে, কারখানা বাড়াবে, সেখানে শ্রমিকও লাগবে বেশি। ফলস্বরূপ বেকারত্বের হার কমতে থাকবে। অর্থনীতিতে এই ব্যপারটি নিয়ে একটা ছোট তত্ত্ব আছে। তত্ত্বটি দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ফিলিপস। তত্ত্বটিকে আমরা অর্থনীতির ভাষায় ফিলিপস কার্ভ নামে চিনি। আমি আর এইদিকে যাচ্ছি না, এমনিতেই লেখা বেশ বড় হয়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ: William Phillips
জন্মের তারিখ এবং স্থান: ১৮ নভেম্বর, নিউজিল্যান্ড
মূল আলোচনায় ফেরা যাক-
অর্থনীতিবিদ: William Phillips
জন্মের তারিখ এবং স্থান: ১৮ নভেম্বর, নিউজিল্যান্ড
অবদান: ফিলিপ্স রেখা
স্কুল বা মতাদর্শ: Neo-Keynesian economics
শিক্ষা: লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স
বই: A. W. H. Phillips
মূল আলোচনায় ফেরা যাক-
তাহলে আমি বলছিলাম যে, মুদ্রাস্ফীতি
হলে বিনিয়োগ বেড়ে যাবে, যোগান বেড়ে যাবে, বেকারত্বের হার কমে যাবে। অর্থাৎ ওই
দেশের অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে। কিন্তু কোনো দেশে যদি মুদ্রাস্ফীতি না থাকে তবে সে দেশে বিনিয়োগ কমে যাবে এবং অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়বে। অর্থাৎ তখন বিনিয়োগকারীরা বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে না। ফলস্বরূপ বেকারত্বের হার বেড়ে যাবে।
এখন
যদি খুব বেশি হারে মুদ্রাস্ফীতি হয়,তখনও একটি দেশের অর্থনীতি ধসে পড়বে। জিনিসের দাম ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে, যেই মানুষগুলোর পকেটে হাজার হাজার টাকা থাকত, সেই মানুষগুলো দেখবে, এই টাকা দিয়ে সে কিছুই কিনতে পারছে না। দেশ ধীরে ধীরে মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাবে যদি সমস্যার উত্তরণ করা না যায়। বাস্তব একটু উদাহরণ দেয়া যাক। ২০০৭ সালের দিকে জিম্বাবুয়েতে চরম আকারে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়, যা সমগ্র বিশ্বে সর্বোচ্চ। খাদ্য সংকট চরম আকারে দেখা দেয়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মানুষ পকেটে টাকা নিয়ে যান এবং ব্যাগভর্তি বাজার করে নিয়ে আসেন। কিন্তু জিম্বাবুয়েতে তার উল্টো। এখানে ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে গেলে পকেট ভর্তি বাজার আসে। জিম্বাবুয়েতে মুদ্রার মান এত পরিমানে কমে গেছে যে, সেখানে একটি প্লাস্টিক ব্যাগে কিংবা একটি ঝুঁড়িতে জিম্বাবুয়ে ডলার নিয়ে গেলে একটা রুটি কিংবা এক লিটার দুধ পাওয়া যায়। তিনটি ডিম কিনতে লাগে ১০০ বিলিয়ন জিম্বাবুয়ে ডলার। যেখানে সম্পদ কম সেখানে টাকা বেশি পরিমাণে থেকে লাভ কি? এত টাকা দিয়ে যে আমি দ্রব্যাদি কিনব, সেই সম্পদ বা দ্রব্যাদি কোথায়? ঠিক এই জিনিসটি-ই হয়েছিল জিম্বাবুয়েতে। অর্থনীতি ব্যবস্থা একদম ধ্বসে পড়েছিল, শুধুমাত্র চরম আকারে মুদ্রাস্ফীতি ধারণ করায়। (তথ্যসূত্র- দৈনিক ইত্তেফাক ১৩ জুন ২০১৫)
এখন
আসা যাক, মুদ্রাস্ফীতি কিভাবে হয়?
ধরে
নিন আপনার দেশে, মৃদু মুদ্রাস্ফীতি রয়েছে, যার ফলে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে এবং এর ফলে চাকরির সুযোগ বেড়েছে, যার ফলে বেকারত্ব কমে গিয়েছে। তার
মানে দাঁড়ায়, আগে যে টাকা উপার্জন করতে পারত না, সে এখন টাকা উপার্জন করে, এবং আপনার মতই চাল কিনতে নতুন ভাবে বাজারে আসা শুরু করে।
এর
ফলে বাজারে চালের চাহিদা বেড়ে যাবে, মানে ধরুন একটি বাজারে মোট চাল বিক্রি হয় ৫০০ কেজি, ১০০ জন ক্রেতা ৪০ টাকা দরে ৫ কেজি করে চাল কিনে নিয়ে যায়।
এখন
একজনের আয় বাড়ার ফলে চালের বাজারে ক্রেতা একজন বেড়ে গেল, এবং ৫০ কেজি চালের জন্য ১০১ জন লাইনে দাঁড়িয়ে গেল।
আর
অর্থনীতির সূত্র অনু্যায়ী কোনো জিনিসের চাহিদা বাড়লে অবশ্যই তার দাম বাড়বে।
তখন
সু্যোগ পেয়ে বিক্রেতারা বলে, "চাল বিক্রি করব ৫০ টাকায়, কেউ নিলে নিবেন, না নিলে না।"
সেই
সূত্রমতে চালেরও দাম বেড়ে যায়, আর চালের দাম বাড়া মানেই মুদ্রাস্ফীতি।
সহজভাবে বললে এভাবেই আসলে মুদ্রাস্ফীতি
ঘটে থাকে।
পরিশেষে বলতে চাই, 'দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি বা মুদ্রাস্ফীতি মানেই যে খারাপ, তা নয়, মৃদু মুদ্রাস্ফীতি
একটি দেশের অর্থনীতির উন্নতির জন্য আবশ্যক।'
আপনাদের মনে মুদ্রাস্ফীতি
বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে বা কোন বিষয়ে সংশয় থাকে তাহলে নির্দ্বিধায় কমেন্ট বক্সে প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা যথসাধ্য উত্তর দিয়ে আপনাদেরকে সাহায্য করব।
ধন্যবাদ সবাইকে, আমাদের সাথেই থাকুন। অন্যদিন অন্য কোন বিষয় নিয়ে হাজির হব। ততদিন ভাল থাকুন, অর্থনীতির সাথেই থাকুন।
আমদের ফেসবুক পেজ এ যেতে -এখানে ক্লিক করুন-
Email: pustecoclub@gmail.com
অর্থনীতি বিভাগ (স্নাতক ২য় বর্ষ)
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সুন্দর পোষ্ট, ধন্যবাদ আপনাকে, অনেক তথ্য সমৃদ্ধ আপনার লেখা ।
ReplyDeleteআপনি কি জানেন, ইমেল মার্কেটিং এর জন্য ১৫,০০,০০০ (পনেরো লক্ষ) ইউ,এস,এ ইমেল লিষ্ট মাত্র ৯৯৯/= টাকা !!!
আপনার নিজস্ব অথবা অন্যের পন্য বা সার্ভিস (এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, সিপিএ মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ত্ত অন্যান্য) বিক্রির জন্য ইমেল মার্কেটিং সবচাইতে কার্জকর ত্ত সহজ একটি মাধ্যম ।
বাংলাদেশে এই প্রথম "" হাবিব আই.টি "" কম্পিউটার ল্যাব থেকে এই সুবিধা দেয়া হচ্ছে । ১৫,০০,০০০ (পনেরো লক্ষ) ইউ, এস, এ ইমেল লিষ্ট মাত্র ৯৯৯/= টাকা । তবে আলোচনা সাপেক্ষে দাম কম/বেশি করা হবে ইনশা-আল্লাহ্ ।
হাবিব আই.টি "" কম্পিউটার ল্যাব এর ইমেল ডাটা বেজে প্রায় ১০০ টি দেশের ৩,৫০,০০,০০০ (তিন কোটি পন্চাশ লক্ষ) ইমেল লিষ্ট সংগ্রহ করা আছে এবং আরত্ত সংগ্রহ কাজ চলছে । যারা আগ্রহী তারা ক্রয় করতে পারেন । না কিনলেত্ত শুধু মাত্র যোগাযোগ করলেই পাবেন সম্মানী হিসাবে ১,০০০ (এক হাজার) ইমেল লিষ্ট একদম বিনামূল্যে। লাইফ টাইম সাপোর্ট দেয়া হবে ইনশা-আল্লাহ্ ।