Economic Depression (part 2)

ইকোনোমিক ডিপ্রেশন (পর্ব ২)


প্রিয় পাঠক, ইকোনোমিক ডিপ্রেশন পর্ব ১ এ আমরা ইকোনোমিক ডিপ্রেশন কি সে সম্পর্কে একটা বেসিক ধারণা দিয়েছিলাম। এই পর্বে আমরা দুইটি ডিপ্রেশন নিয়ে আলোচনা করবো, এবং কেন এই ডিপ্রেশন হয়েছিলো, এর প্রভাব কি ছিলো তা জানার চেষ্টা করবো।
তাহলে চলুন প্রথমে ১৯২৯ সালের গ্রেট ডিপ্রেশন নিয়ে আলোচনা করা যাক।

তখনকার অর্থনীতির যুগ ছিলো ক্লাসিকাল,  তখন অর্থনীতির ব্যবস্থা চলত মার্কেটের উপর ভিত্তি করে। অর্থনীতিতে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ ছিলো না। মার্কেট তখন একা একাই চলতো এবং ইকুইলিব্রিয়াম পজিশনে থাকতো৷ এই একাই চলাকে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ লেইজস ফেয়ার বলে আক্ষায়িত করেছেন। অর্থ্যাৎ অর্থনীতি চলতো এক অদৃশ্য হাতের দ্বারা। ক্লাসিকাল ত্বত্ত এটাই বলে।

এই গ্রেট ডিপ্রেশন শুরু হয় ১৯২৯ সালে এবং শেষ হয় ১৯৩০ দশকের শেষের দিকে। ১৯২৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পুঁজি বাজারে দরপতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মহামন্দা শুরু হয়। পরে ১৯২৯ সালের ২৯ অক্টোবর এটি বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পরে যা কালো মঙ্গলবার বলে পরিচিত।
1929 সালের স্টক মার্কেট ক্র্যাশের আগে অযৌক্তিক বৈরাগ্য দিয়ে ভরা ছিল। শেয়ারের দাম বেড়েছে বোর্ড জুড়ে, এমনকি এমন কোম্পানীর জন্য যেগুলি সামান্য লাভ করেছে এবং বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী যে বাজারের সাধারণ ঊর্ধ্বগামী প্রবণতা এবং অর্থনীতি কিছু সময়ের জন্য অব্যাহত থাকবে। ডো জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ প্রায় দ্বিগুণ, তবে মূল্যস্ফীতি ক্রমাগতভাবে নেমে আসে এবং বিনিয়োগকারীদের মুনাফা উঠতে শুরু করে।
এরপর 10 অক্টোবর, ব্ল্যাক ফ্রাইডে "ডো জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিড প্রায় 10 টি ট্রেডিং দিবসে প্রথমবার 350 এর উপরে বন্ধ হয়ে যায়। এই অব্যাহতি লাভ গ্রহণ ছড়িয়ে পরে, এবং ডো জোন্স শিল্পকৌশল গড় আবার পতনশীল হতে শুরু করে। কালো বৃহস্পতিবার থেকে অক্টোবর 29, 1929 (কালো মঙ্গলবার), স্টক এখনও $ 26 বিলিয়ন মূল্য হ্রাস এবং 30 মিলিয়ন শেয়ারের পরিবর্তে হাত পরিবর্তিত হয়।
পরিস্থিতি প্রভাবিত আমেরিকান অর্থনীতির জন্য একটি বড় বাঁক পয়েন্ট, কারণ এই অনেক ঋণগ্রহীতা, যারা বেলের বাজারে অংশ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে নিজেদেরকে লাভবান করেছে, তারা তাদের ঋণ ফেরত দিতে সবকিছু বিক্রি ছিল, এবং অনেক তাদের সব ফিরিয়ে দিতে পারে না। ফলে হাজার হাজার ব্যাংক ব্যর্থ হয়েছে; ব্যবসা বন্ধ, ক্রেডিট পেতে অক্ষম; এবং জাতির ডিসপোজাল আয় হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।

ঐতিহাসিকরা প্রায়ই 1929 সালের স্টক মার্কেট দুর্ঘটনাকে গ্রেট ডিপ্রেশনের শুরু বলে উল্লেখ করেন কারণ এটি শুধুমাত্র জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ বাবলের বাজারের শেষের দিকে নয়, বরং ব্যাপক আশাবাদের শেষ এবং মার্কিন অর্থনীতিতে আস্থা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পতন এবং বেকারত্ব বেড়েছে 25%। বিষণ্নতা দ্রুত ইউরোপ এবং বাকি বিশ্বের ছড়িয়ে পড়ে ইতিহাসে এটি সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক পতন। গ্রেট ডিপ্রেশন 1941 সালে শেষ হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও বেকারত্বের হার কমে না।
গৃহহীনতা এবং দারিদ্র্য বিস্তৃত ছিল, অনেক আমেরিকানকে অস্থায়ী বাসস্থান নির্মাণের জন্য বাধ্য করা হয়েছিল। সেই সময়ে, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা, মেডিকেয়ার এবং মেডিকেড বিদ্যমান ছিল না।

বিনিয়োগকারী মনোবিজ্ঞানের উপর নাটকীয় প্রভাব ছাড়াও, গ্রেট ডিপ্রেশন বিভিন্ন আইন, সংগঠন এবং বিভিন্ন সংস্থার সৃষ্টি করেছে দেশের অবকাঠামো, আরও সামাজিক কল্যাণ ও কর্পোরেট জালিয়াতি এবং অপব্যবহার প্রতিরোধে পরিকল্পিত প্রোগ্রাম করেছে। এর মধ্যে ফেডারেল ডিপোজিট ইনসিওরেন্স কর্পোরেশন (এফডিআইসি) এবং 1933 সালের সিকিউরিটিজ অ্যাক্ট, 1933-এর গ্লাস-স্টেঘল অ্যাক্ট, 1934 সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অ্যাক্ট এবং 1935 সালের পাবলিক ইউটিলিটি হোল্ডিং অ্যাক্টের অন্তর্ভুক্তি  ছিল। তথ্য বিলম্বের কারণেও দ্রুততর টিকি-টের সিস্টেম তৈরি হয় যা ভারী ট্রেডিং দিনগুলি পরিচালনা করতে পারে।
এর রাজনৈতিক প্রভাবও পরে সারা বিশ্বে। বেশির ভাগ দেশেই ত্রাণ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয় এবং অনেক দেশ রাজনৈতিক বিপ্লবের সম্মুখীন হয়। ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারী শাসনের কাছে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে, বিশেষ করে ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নাৎসি জার্মানি।। নিউফাউন্ডল্যান্ডের কর্তৃত্বের ফলে স্বেচ্ছায় গণতন্ত্র ছেড়ে দিতে হয়।

প্রিয় পাঠক এবার একটু ২০০৭ সালের আমেরিকা ডিপ্রেশনের দিকে নজর দেয়া যাক।

২০০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রধান কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গৃহায়ণ খাতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। দেশটির বন্ধকি বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ব্যবস্থা ও আর্থিক খাতের শিথিল নিয়ন্ত্রণই মন্দার শুরুটা করেছিল। সে সময় ব্যাংকগুলো খুব সহজেই ঋণ দিচ্ছিল।

২০০৭ সাল থেকে মন্দা শুরু। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি বিক্রি শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। অথচ বাজারে দাম নেই। ২০০৮ সালে তা সারা বিশ্বেই সংক্রমিত হয়। অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলো কেন, তা নিয়ে ফরক্লোজার আইনজীবী শ্যারি ওলেফসন বলেন, একটি কারণ হলো—ব্যাংকগুলো খুব দ্রুত মুনাফা লাভের আশায় গ্রাহকদের সহজ শর্তে বাড়ির ঋণ দিচ্ছিল। বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। দ্বিতীয় কারণ—অনেক মার্কিন নাগরিক যাঁরা আবাসন খাতে অভিজ্ঞ ছিলেন না, বেকার ছিলেন, তাঁরাও এ খাতে বিনিয়োগ করা শুরু করেন।
ওলেফসন বলেন, অনেক মানুষ ওই ফাটকা বাজারে বাড়ি কিনেছিলেন। তাঁদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এমনও দেখা গেছে যে সেলুনের কর্মী চার-পাঁচটা বাড়ি কিনেছেন। কিন্তু যখন এই আবাসন খাতের বুদ্‌বুদ ছাপিয়ে পড়ল, তখন বাড়ির দামও কমে গেল। আর বন্ধকি ঋণের সুদের হারও রাতারাতি বেড়ে গেল। একেকজনের ব্যক্তিগত ঋণের বোঝা বেড়ে গেল বহু গুণ।
অনেকেই ঋণ পরিশোধের কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

ব্যাংকগুলো যখন ঋণের সামঞ্জস্য করা শুরু হলো, তখন অনেকেই বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না। পুরো বিষয়টি অর্থনীতিতে একধরনের তরঙ্গ প্রভাব ফেলে। অনেকটা পুকুরে পাথর ফেলে তরঙ্গ সৃষ্টি করার মতো। একদিকে বন্ধকি জমির দখল নেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন করে বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করেছে মানুষ। এ কারণে বাড়ির দাম পড়তে শুরু করে। আবাসন খাতের সংকট ছড়িয়ে গেল আর্থিক খাতে। আর্থিক খাত ও অর্থনীতিতে মন্দা এভাবে শুরু হওয়ার পর তা ছড়িয়ে পড়ে ওই সব শিল্পে, যেগুলো আর্থিক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। ১৯৩০ সালের গ্রেট ডিপ্রেশনের পর ওটায় ছিল সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দা।

আবাসন খাতের তথ্য বিশ্লেষণকারী সংস্থা রিয়েলটিট্রাক জানায়, ২০০৮ সালে রেকর্ড পরিমাণ বন্ধকি সম্পত্তির দখল নেওয়া হয়। একদম সঠিক হিসাব হলো ৩১ লাখ, যা ২০০৭ সালের চেয়ে ৮১ শতাংশ ও ২০০৬ সালের চেয়ে ২২৫ শতাংশ বেশি। এরপর ২০০৯ সালে ৩৮ লাখ বন্ধকি সম্পত্তির দখল নেওয়া হয়, যা ২০০৮ সালের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি ছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নেভাদা, ফ্লোরিডা ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাসন খাতের এমন পতন এখনকার পরিস্থিতে হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এখন বন্ধকি ঋণ পাওয়া বেশ কঠিন।

(সূত্রঃ Wikipedia,  প্রথমআলো,  bn.mfginvest )

প্রিয় পাঠক এই ছিলো পর্ব ২ এর আলোচনা। আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো উত্তর দেয়ার জন্য।
এরপরে আমরা আবার অন্য কোন টপিক নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর আমাদের সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ সবাই কে।

লেখক
মোঃ রাশেদুল ইসলাম
স্নাতক ২য় বর্ষ
অর্থনীতি বিভাগ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

2 comments:


  1. শুভকামনা তোমার জন্য

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ। ☺

      Delete

Powered by Blogger.