একদিন এক অর্থনীতিবিদ একটি বারে প্রবেশ করলো!


“একদিন এক অর্থনীতিবিদ একটি বারে প্রবেশ করলো।”
-বক্তাঃরবার্ট.ই.লিটন
 Robert. E. Litan
                                                               
                                                             



“তো,একদিন দুই ব্যাক্তি একটি বারে প্রবেশ করলো,
না!আমি সেখানে যাচ্ছি না,এটা একটা কৌতুকের শুরু হতে পারতো।কিন্তু আমি সত্যিই চাই যে কৃত্তিম ঘাটতি'র ধারণার এটাই শিরোনাম হোক।এবং তার কারণ আপনারা কিছু মুহুর্তের মধ্যেই বুঝতে পারবেন।

তো,বারে ফিরে যাওয়া যাক!

প্রথম ব্যক্তি,সে প্রথমেই যেই মহিলাকেই দেখতে পেল,তার কাছে গেল এবং তাকে ড্রিংক্স অফার করলো।মহিলাটি লোকটির প্রস্তাব নাকচ করে দিলো।অতঃপর লোকটি সিদ্ধান্ত নিলো যে,সে বারে উপস্থিত সকল মহিলাকেই প্রস্তাব দিবে,সব মহিলাই লোকটির কর্মকান্ড দেখছিলো,তারা বুঝে গিয়েছিলো লোকটি আসলে কি চাচ্ছে।এবং সকলেই লোকটির প্রস্তাব নাকচ করে দিলো।

এখন আমাদের ব্যাক্তি,আমি তাকে ‘এন্টি-হিরো’ বলবো।সেই এই অভিজ্ঞতা থেকে বাস্তব জগৎ-এ কিছু শিখলো না।তো সে সিদ্ধান্ত নিলো ভার্চুয়াল জগৎ কে বেছে নেওয়ার।সে ইন্টারনেট এ গেলো এবং কিউপিড.কম এ জয়েন করলো।এবং সেও একই কৌশল অবলম্বন করলো,ও নিশ্চিতভাবেই একই ফলাফল পেল,সবাই তার প্রস্তাব নাকচ করে দিলো।তো আমাদের এন্টি-হিরো এখন বিপদের ভিতর আছে।

কিন্তু আপনারা কি জানেন?

এখন কিউপিড.কম ও বিপদের মধ্যে আছে।এবং এর কারণ হচ্ছে,যেসব মহিলারা কিউপিড.কম জয়েন করেছিলো তারা প্রচুর পরিমাণে ডেটিং এর প্রস্তাবে ডুবে যাচ্ছিলো।তারা নিরুৎসাহিত হয়ে গেলো,এবং কিউপিড.কম ব্যবহার করা বন্ধ করে দিলো।যেহেতু তারা ব্যবহার করা বন্ধ করে দিলো সেহেতু পুরুষরাও ব্যবহার করা বন্ধ করে দিলো,কিউপিড এখন খুব বিপদে আছে।

আপনারা কাকে ডাকবেন?এই সমস্যার সমাধান করতে?

না,উত্তরটি ‘ঘোষ্টবাস্টার্স’ এর থেকেও বেশি সুস্পষ্ট।

আপনারা একজন অর্থনীতিবিদকে ডাকবেন।

হাঁসবেন না,আপনারা একজন অর্থনীতিবিদকেই ডাকবেন।

আসলে আপনারা দুইজন অর্থনীতিবিদ কে ডাকবেন।

এরা একজন স্ট্যানফোর্ডের মেরিয়েল নিডারলে এবং আরেকজন ডিউকের ড্যান এরিয়ালি
এবং তারা অনলাইন ডেটিং প্রসঙ্গে কৃত্তিম ঘাটতি এবং প্রাচুর্যতার ওপর পড়াশোনায় অনেক সময় পার করেছে।যে কারণে কিউপিড তাদের স্মরণাপন্ন হয় এবং জানতে চায় কিভাবে তাদের এই সমস্যার সমাধান করা যায়।এবং সেই দুই অর্থনীতিবিদ জানালো যে তাদের কাছে একটা বুদ্ধি আছে যা কিনা যতটা সরল ততোটাই গভীর।কেবলমাত্র পুরুষরা মহিলাদের প্রতিমাসে যে ডেটিং অফারগুলো দেয় তার সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিন।


Muriel Niederle
Dan Ariely















এটাকেই বলে কৃত্তিম ঘাটতি,যে সম্পদকে দেখে অপরিসীম বলে মনে হয়,যা এ ক্ষেত্রে ডেট অফার,তাদের কে কৃত্তিমভাবে রুদ্ধ করা।

এবং অর্থনীতিবিদরা কিউপিড কে বললো,যদি আপনারা এরকম করেন তাহলে পুরুষরা তাদের অফার গুলোকে সচেতনভাবে ব্যবহার করবে।এবং তারা তখন শুধু মহিলাদের ছবির দিকে তাকাবে না,তখন তারা মহিলাদের প্রোফাইলও দেখবে।মহিলারা তখন তা জানবে এবং ডেট অফার গ্রহণের ক্ষেত্রে আরো আগ্রহী হবে।

এভাবেই কৃত্তিম ঘাটতি কিউপিড.কম এবং অন্যান্য ডেটিং সাইটকে বাঁচিয়ে দেয়।যারা কিনা একই পদ্ধতি অনুসরণ করে।


আজ অনলাইন ডেটিং শুধুমাত্র নর্থ আমেরিকায় দুই বিলিয়ন ডলারের একটি শিল্প।


এখন,আমি অনলাইন ডেটিং এবং কৃত্তিম ঘাটতি ছাড়াও আরও অনেক কিছু নিয়ে কথা বলতে চাই,এদের থেকেও বড় বিষয় নিয়ে।


আমি আপনাদের দেখাতে চাচ্ছি যে,কীভাবে অর্থনীতিবিদ’রা এবং তাদের উদ্ভাবিত বুদ্ধিগুলো,সম্পূর্ণ ইন্টারনেট অর্থনীতির এবং কিছু অসাধারণ প্রতিষ্ঠানের উত্থানে অবদান রেখেছিল।


আমি নিশ্চিত আপনাদের ভিতর অনেকেই প্রাইসলাইন(Priceline) এর দ্বারা উদ্ভাবিত ‘নেইম-ইউর-প্রাইস’ ট্রাভেল (‘Name-Your-Price’ travel) ধারণার সাথে পরিচিত।যদিও ‘নেইম-ইউর-প্রাইস’ ট্রাভেল পদ্ধতি তাদের সফলতার মূল চাবিকাঠি ছিল না।কারণ,আপনারা যদি আপনাদের আকাঙ্ক্ষিত মূল্যের পরিমাণ প্রস্তাব করতে পারতেন,তাহলে কত পরিমাণ মূল্য আপনারা প্রস্তাব করতেন?

শুণ্য,তাই না? অথবা এক বা দুই।এবং অবশ্যই তখন এয়ারলাইন্স অথবা হোটেল এর খরচগুলোর কারণে তারা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করতো না।প্রাইসলাইন এর সাফল্যের মূল চাবি তাদের অসাধারণ বিজ্ঞাপনও ছিল না।আপনি সেখানে অনলাইনে সার্চ করতে পারতেন;এক্ষেত্রে সেটাও কোন ব্যাপার ছিল না।প্রাইসলাইনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ছিল........... প্রসঙ্গক্রমে বলে নিচ্ছি যে এটি বর্তমানে ৬০ বিলিয়ন ডলার মার্কেট ক্যাপিটালের একটি প্রতিষ্ঠান।তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ছিল,আপনাকে দিয়ে এই প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেওয়া যে,যদি আপনি হোটেল রুম বা ফ্লাইটের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের মূল্য প্রস্তাব করেন এবং প্রাসইলাইন যদি তা মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেই মূল্য পরিশোধের জন্য আপনি বাধ্য থাকবেন।


এই পদ্ধতিকে কন্ডিশনাল প্রাইস অফার(Conditional Price Offer) বলা হয়।এবং মূলত এই পদ্ধতি আপনাকে একজন ভ্রমণকারী হিসেবে আপনার সুযোগটিকে আরও আগ্রহ সহকারে গ্রহণ করার জন্য প্রণোদিত করে।ঠিক একই পন্থায় যেভাবে কৃত্তিম রুদ্ধতা কিউপিড.কম এ পুরুষদের জন্য ডেটিং প্রপোজাল এর ক্ষেত্রে করেছিল।


তো কন্ডিশনাল প্রাইস অফার এর পিছনের সেই দ্বীপ্তিমান মানুষটি কে?
(এ পর্যায়ে বক্তা তার হাতে থাকা রিমোটটির একটি বোতাম চাপলো,এবং স্ক্রিনে একজন ব্যক্তির ছবি ভেসে উঠলো,ছবির ওপরে লেখাছিল Star Trek Economist’ এবং তা দেখে দর্শকমণ্ডলী হেঁসে উঠলো।পরবর্তীতে বক্তা বলতে শুরু করলো......................)
সে একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি,কিন্তু ক্যাপ্টেন কার্ক এই পদ্ধতিটির উদ্ভাবক ছিলেন না।সে প্রাইসলাইনের জন্য পিচ্ম্যান(Pitchman/Hawker) ছিলেন এবং বর্তমানেও আছেন।

Jay Walker
প্রাইসলাইনের  পেছনে আসল জিনিয়াস ব্যক্তিটি ছিলেন জে ওয়াকার জে একজন আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী হিসেবে কর্ণেল এ ইকোনোমিক্স নিয়ে পড়তেন।তিনি মূলত শুনতেন এবং তার কর্ণেল এর প্রভাষকরা তাকে যা বলতেন,তিনি সেই সবের থেকে দুই কদম আগে চিন্তা করতেন এবং যার ফল স্বরূপ কন্ডিশনাল প্রাইস অফার ধারণাটির উদ্ভব হয়,যা পরবর্তীতে প্রাইসলাইনকে নেতৃত্ব দেয় এবং আমেরিকার সম্পূর্ণ ট্রাভেল ইন্ডাষ্ট্রিতে বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়।
আমার কাছে আরেকটি উদাহরণ আছে।এটির সাথেও আপনারা খুবই পরিচিত।(এ পর্যায়ে স্ক্রিনে গুগলের একটি সার্চ পেজের ছবি ভেসে উঠলো)
এটি গুগলের একটি সার্চ পেজ।উদাহরণ হিসেবে অন্য যেকোন সার্চ ইঞ্জিনও নেওয়া যেতে পারে,তবে আমি আসলে চাচ্ছি যে আপনারা পেজের ডান পাশে মনোযোগ দিন,যেখানে বিজ্ঞাপণগুলো আছে।গুগল প্রতি বছর ছোট বড় বিজ্ঞাপণদাতা’দের কাছে থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে,যারা পেজের ঐ ডান পাশে বিজ্ঞাপণ দেওয়ার জন্য জায়গা খুঁজছে।গুগল এসব জায়গা বণ্টনের জন্য নিলাম করে থাকে।কিন্তু এই ব্যবস্থাটি এভাবে শুরু হয়নি।কারণ গুগল যখন চালু হয়েছিল,তখন অনলাইন বিজ্ঞাপণ ব্যবস্থা এটির শৈশবকালে ছিল এবং গুগল,বিশ্বাস করুন বা না করুন,তাদের সার্চ পেজের পাশে বিজ্ঞাপণদাতা’দের বিজ্ঞাপণ দেওয়ানোর জন্য বিজ্ঞাপণদাতা’দের দরজায় দরজায় যেত।খুবই শ্রমসাধ্য কাজ,এবং আপনি দ্রুতই দেখতে পাবেন যে কাজের ফলাফল গুগলে সার্চ সংখ্যার বিস্ফোরণের তুলনায় আশানুরূপ হচ্ছে না।তো গুগলের প্রতিষ্ঠাতারা এই সমস্যার একটি স্বয়ংক্রিয় সমাধানের জন্য এরিক ভিচ এবং সালার কামাঙ্গার নামের দুজন তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের শরণাপন্ন হলেন।যদিও তারা প্রবৃত্তিগতভাবেই নিলামের প্রতি আকৃষ্ট ছিল।কিন্তু তারা অন্য একটি সমস্যা নিয়ে চিন্তিত ছিলো।তারা এই ভেবে ভয় পাচ্ছিলো যে,যদি তারা সাইটগুলোর নিলাম করতো,তাহলে বিজ্ঞাপণদাতা’রা খুবই নগণ্য মানের মূল্য প্রস্তাব করতো এবং ক্রমাগতভাবে খুবই অল্প পরিসরে তাদের প্রস্তাবিত মূল্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করতো এভাবে তারা নিলামটিকে আজীবনের জন্য চালিয়ে যেতে পারতো।যদি তা ঘটতো এবং তার সাথে একই সময়ে বিপুল পরিমাণের সার্চ হতে থাকতো তাহলে সম্পূর্ণ সাইটটি ক্র্যাশ করতো।তো তারা ইঞ্জিনিয়ারিং সমাধান হিসেবে একটি উপায় বের করলো যে,বিজয়ী নিলামকারীর পরিশোধের মূল্য পরিমাণ হবে দ্বিতীয় বিজয়ী নিলামকারীর প্রস্তাবিত পরিশোধ মূল্যের থেকে ১ পেনি(penny) বেশি।এই পদ্ধতি নিলামগুলোকে সংক্ষেপ এবং সরল প্রক্রিয়ার করে দিবে এবং এই পদ্ধতি একই সাথে     ‘দ্যা উইনার্স কার্স’(The Winner’s Curse) নামের সমস্যারও সমাধান করে দেয়।
আমি নিশ্চিত আপনাদের ভিতর অনেকেই বিভিন্ন নিলামে অংশগ্রহণ করেছেন,এবং হয়তো নিলামে জয়ী হওয়ার পরও আফসোস করেছেন এই ভেবে যে,আপনি বুঝি দরকারের থেকে বেশিই মূল্য পরিশোধ করছেন।খুবই স্পষ্ট বিষয়।কিন্তু গুগলের তৎকালীণ সিইও(CEO) এরিক স্মিড্, তখনও এই পদ্ধতিতে (সেকেন্ড প্রাইস অকশন) নিলাম চালিয়ে যাওয়ার মতো সন্তুষ্ট হতে পারেন নি।
(বক্তব্যের এ পর্যায়ে স্ক্রিনে এক ব্যক্তির ছবি ভেসে ওঠে এবং ছবির ওপরে লেখাছিল ‘Who is this man and why is he important?’ তারপর বক্তা বলতে শুরু করলেন......................)
Hal Varian
তক্ষণ না পর্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে গুগলের সিইও এই ব্যক্তির কাছে গেলেন।এই ব্যক্তির নাম হ্যাল ভেরিয়েন ,তৎকালীন সময়ে তিনি বার্কেলি এর ইনফরমেশন সাইন্সেস স্কুলের ডীন এবং প্রথাগত নিলাম ও অনলাইন নিলামের বিশ্বসেরা বিশেষজ্ঞদের ভিতর একজন ছিলেন।
স্মিড্,ভেরিয়েন কে জিজ্ঞেস করলেন,’এই সেকেন্ড প্রাইস অকশনের আদৌ কি কোন ভিত্তি আছে?আমরা কি ফার্স্ট প্রাইস নিয়ে কাজ করতে পারি না?’
ভেরিয়েন প্রশ্নটি নিয়ে ভাবলেন এবং স্মিড্কে বলতে লাগলেন,’আপনি কি জানেন?ঐ দুজন ইঞ্জিনিয়ার আসলে কলম্বিয়ার একজন অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম ভিক্রে এর একটি তত্ত্ব পুনরায় উদ্ভাবন করে।ভিক্রে গাণিতিকভাবে প্রমাণ করে দেখিয়েছিল যে সেকেন্ড প্রাইস অকশন(Second Price Auction)  ছিল উইনার্স কার্স সমস্যার জন্য একটি আদর্শ সমাধান।
(এরপর বক্তা দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন......................)
William Vickrey
এবং আপনারা কি জানেন?উইলিয়াম ভিক্রে তার এই অবদানের কারণেই ১৯৯৬ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার পান।এখন আপনি নিজেকে একটু এরিক স্মিড্ হিসেবে ভাবুন।আপনার তখন মনে হতেই পারে ‘তাহলে,অর্থনীতিবিদ’রা মনে হয় গুগলকে সাহায্য করতে পারবে।তখন স্মিড্,হ্যাল ভেরিয়েনকে বার্কেলিতে তার তৎকালীন চাকরী ছেঁড়ে দিতে বলেন,এবং গুগলের সর্বপ্রথম চিফ ইকোনোমিস্ট হিসেবে যোগদানের জন্য প্রস্তাব দেন।ভেরিয়েন পরবর্তীতে গুগলে যোগদেয় এবং প্রচুর পরিমাণে পরিসংখ্যানবিদ এবং অর্থনীতিবিদ’দের নিয়োগ দেয়,যারা ভবিষৎ এ অনলাইন বিজ্ঞাপণ নিলামের প্রক্রিয়া পরিশোধনের ক্ষেত্রে প্রচুর অবদান রাখেন এবং মাউনটেইন ভিউ জায়ান্ট(Mountain View Giant) এর জন্য আরো অন্য সেবাগুলোরও উন্নতি সাধন করেন।
আপনারা একটা প্রবাদ বাক্য হয়তো শুনে থাকবেন যে,চাটূক্তি করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে অনুকরণ করা।এবার একটু অনুমান করে বলুন তো,মাইক্রোসফট্ এর একদম শুরু থেকে কে তাদের উপর থেকে দেখে আসছিল?গুগলের প্রধান প্রতিদ্বন্দি অথবা আসন্ন প্রতিদ্বন্দি মাইক্রোসফট্,তারা তাদের নিজস্ব হ্যাল ভেরিয়েন কে চেয়েছিল।

Susan Athey 
এবং তারা তাকে পেয়েও যায়,তিনি হচ্ছেন সুজান এইথি ।সুজান স্ট্যানফোর্ড এর একজন রকস্টার অর্থনীতিবিদ (Rock Star Economist),নিলাম তত্ত্বের ওপর একজন বিশ্বসেরা বিশেষজ্ঞ,এবং মাইক্রোসফট্ এর জন্য অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি অধ্যাপনা’ও করে থাকেন।
আমার কাছে তৃতীয় উদাহরণও আছে;এবং এটা আগের দুই উদাহরণ এর থেকেও বড়।এটা সম্পূর্ণ অনলাইন খুচরা ব্যবসাকে নিয়ে।এটি শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৩০০ বিলিয়ন ডলারের একটি শিল্প।এবং আপনারা অনলাইন খুচরা ব্যবসার পোষ্টার চাইল্ড (Poster Child) কে সবাই চিনেন।হ্যাঁ, আমি অ্যামাজন.কম এর কথা বলছি।এখন আপনাদের ভিতর অনেকেই ভাবতে পারেন যে,হয়তো অ্যামাজনের সফলতা এসেছে তাদের অসাধারণ গুদামজাতকরন এবং হিসাব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে।আপনি মূলত অনলাইনে তাদের কাছে যা’ই অর্ডার করবেন তারা সেই সব পণ্য আপনার কাছে পৌছে দিতে সক্ষম।কিন্তু আপনারা কি জানেন? অ্যামাজন এবং অন্যান্য অনলাইন খুচরা ব্যবসায়ীরা এতো অতিনমনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া এতোটা সফল হতো না যেটা কিনা তাদের পণ্য ডেলিভারিতে আসল সাহায্য করে।এখন ধারণা করে বলুন তো?কারা এই যোগাযোগ ব্যবস্থার বাস্তব রূপ দিতে সবথেকে বেশি সাহায্য করেছিল?
অর্থনীতিবিদ’রা!
কারণ ১৯৮০ এর সময় যখন জেফ বেজোস কেবল মাত্র একজন কিশোর ছিলেন,তখন এয়ারলাইন এবং ট্র্যাকিং ইন্ডাস্ট্রি গুলোকে খুবই কঠোরভাবে সরকারী আইন মেনে চলতে হতো।প্রত্যেকটি টোল এবং প্রত্যেকটি রাস্তা,যেখান থেকে তাদের ওপর কর আরোপ করা হতো অথবা যেখান থেকে তারা উড়ে যেতো অথবা যেখান থেকে তারা যানবাহন পারাপার করতো,সবকিছুর জন্যই সরকারের অনুমোদন লাগতো।এমন কি এক এয়ারলাইন কোম্পানি, যাদের নিজস্ব ট্রাকিং ব্যবস্থা ছিল,তাদের ওপর এমনও নিয়ম আরোপ করা হয়েছিল যে তারা যে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবে সেখান থেকে ২০ মাইল দূরত্বের বাইরে তাদের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারবে না।এই নিয়মটি আসলে অন্য ট্রাকিং কোম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তৈরি হয়েছিল,মূলত এটাই ছিল এয়ারলাইন আর ট্রাকিং রেগুলেশনের আসল এবং প্রথম কারণ।এ কারণেই অর্থনীতিবিদ’রা এর ঘোর বিরোধিতা করেন।কিন্তু তাদের বিরোধিতা করার আরেকটি কারণ আছে।যোগাযোগ শিল্পে প্রচুর এয়ারলাইন্স এবং ট্রাকিং ফার্ম আছে।এখানে ন্যাচারাল মনোপলির মতো কোন বিষয় নেই যেমনটা লোকাল ইউটিলিটির ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক মূল্য বৃদ্ধি থামানোর জন্য রেগুলেশনের প্রয়োজন হয়।তাই এয়ারলাইন্স এবং ট্রাকিং ব্যবস্থাকে রেগুলেট করার কোন প্রয়োজন’ই ছিল না।
এবং যেই তিন অর্থনীতিবিদ এই বিষয়ে সব থেকে জোর আপত্তি জানিয়ে ছিলেন তারা হচ্ছেন মাইকেল লেভ্ইন,আলফ্রেড কান এবংডারায়াস গেস্কিন্স,এবং বিশ্বাস করুন এছাড়াও আরও অনেকেই ছিলেন যারা দশকের পর দশক এই বিষয়ে লেখালেখি করেছেন এই বিশ্বাস নিয়ে যে আমাদের এই উন্মত্ত ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ।সেই সময়ে দুই জন রাজনীতিবিদ ছিলেন,সাহসী রাজনীতিবিদ,যারা অবশেষে এইসব ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলাদের কথা শোনেন এবং পরপর ১৯৭৮ ও ১৯৮০ সালে যোগাযোগ ব্যবস্থার শিল্পপতিদের ঘোর বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস এর সভায়,এয়ারলাইন এবং ট্রাকিং রেগুলেশন ব্যবস্থা উৎখাত করে দেওয়ার প্রস্তাব পেশ করেন।এবং এই ব্যবস্থা উৎখাতের পর স্বাভাবিকভাবেই তখন প্রোডাক্ট ডেলিভারির খরচ কমে গেল।
কিন্তু আমার গল্পের জন্য তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে; ট্রান্সপোর্ট ডিরেগুলেশন, বিশাল দুইটি যোগাযোগ ব্যবস্থা কোম্পানি ইউ.পি.এস(UPS) এবং ফেডএক্স(FedEx) এর ভেতর যে এক প্রকার শক্তিশালী প্রতিযোগীতার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছিল,তার বদৌলতে তারা উন্নয়নের মাধ্যমে খুবই কার্যকর এবং খুবই নমনীয় একটি যোগাযোগ ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছিল যা অনলাইন অর্থনীতির জন্য আদর্শ ছিল।তো,যখন ২০ বছর পর জেফ বেজোস এবং অন্যান্য অনলাইন খুচরা ব্যবসায়ীরা আসলো,তারা তখন সহজেই এই ব্যবস্থার সাথে মিশে গেল এবং একে ব্যবহার করা শুরু করে দিলো।সত্যি বলতে,জেফ বেজোস,আপনি যদি আমার এই বক্তব্য এখন শুনছেন,তাহলে আমি কিছুক্ষণ আগে যেই তিন অর্থনীতিবিদ’দের দেখালাম,তাদের এবং সংশ্লিষ্ট আরো অনেককে যারা আপনার ভাগ্যকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব করেছে,তাদের কাছে আপনার একটি ধন্যবাদ জ্ঞাপক চিঠি পাঠানো উচিৎ।
আমি শেষ একটি উদাহরণ দিয়ে ইতি টানতে চাই,এটির ইন্টারনেটের সাথে কোন সম্পর্ক নেই,যদি আপনি ৩২ মিলিয়ন মানুষকে,যারা  অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের কাল্পনিক খেলা খেলে থাকে তাদের কে গণনায় না ধরেন।আমি খেলার কথা উল্লেখ করলাম,কারণ আমি নিজে একজন খেলা পাগল লোক,এবং আমি আপনাদের সাথে মানিবল্ (Moneyball) নিয়ে কথা বলতে চাই।আমি নিশ্চিত আপনাদের ভেতর অনেকেই মুভিটি দেখেছেন।এটি একটি বইয়ের ওপর নির্ভর করে বানানো।চমৎকার বই এবং মুভি,এবং এর লেখক হচ্ছেন মাইকেল লুইস ,এবং আমার মতে তিনি আমেরিকার অথবা বলা যায় বিশ্বের সেরা নন-ফিকশন লেখকদের ভেতর একজন।এবং আপনারা যেমনটা জানেন মানিবল এর মূল আকর্ষন ছিল ওকল্যান্ড এএস এর জেনেরাল ম্যানেজার বিলি বিন্ এর ব্যপারে যে কিনা একটি অসাধারণ বেইজবল টিম তৈরি করে দেখিয়েছিল খুবই অপ্রতুল বাজেটে।কিন্তু মানিবল আসলে অন্যান্য গতানুগতিক বেইজবল মুভি যেমনঃবুল ডুরহাম অথবা ফিল্ড অব ড্রিমস্ থেকে আলাদা ছিল।
Bill James
মানিবলের মূল নায়ক ছিলেন বিল জেমস্,আপনাদের ভিতর অনেকেই তাকে নাও চিনতে পারেন,কিন্তু আমি আপনাদের জোর দিয়ে বলছি বেইজবলে তার অবদান হ্যাঙ্ক অ্যারন  অথবা বেব রুথ এর থেকে কোন অংশে কম নয়।কারণ সে অর্থনীতি এবং পরিসংখ্যান প্রয়োগ করে দেখিয়েছিলেন কীভাবে তথ্যের সাহায্য নিয়ে একটি বেইজবল ম্যাচ জেতা যায়।তার দ্বারা সেবারমেট্রিক্স (Sabermetrics) উদ্ভাবিত হয়।যেটা বিলি বিন এবং অন্যান্য বেইজবল টিম তাদের খেলার তালিকা তৈরিতে ব্যবহার করেছিল।এবং এটি অনেক আগে থেকেই প্রফেশনাল বেইজবলেও ব্যবহার হয়ে আসছে,এবং কেবলমাত্র বেইজবলেই নয়,সেবারমেট্রিক্স প্রফেশনাল বাস্কেটবল টিম এর দ্বারাও ব্যবহৃত হয়,ফুটবল(আমেরিকান ফুটবল) টিমের দ্বারাও ব্যবহৃত হয় এমনকি হকি টিমের ভেতরেও বিল জেমসের মতো লোকদের রাখা হয়।
অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনা ক্রীড়াঙ্গনেও বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে।
আমি আমার ক্যারিয়ারে সৌভাগ্যক্রমে ব্যবসায় দুনিয়ার অনেক লোকের সাথেই দেখা করেছি,কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে আমার মতানুযায়ী ঐসব লোকেদের সিংহভাগই অর্থনীতিবিদ’দের কোন সম্মান করেন না।তারা বলে ‘আমরা’ নাকি কখনো কোন পেরোল’ই(Payroll) দেখিনি।এখানে আমরা বলতে অর্থনীতিবীদ’দের বোঝানো হচ্ছে।তারা(অর্থনীতিবিদ'রা) কী জানে?
অর্থনীতিবিদ’রা অনলাইন অর্থনীতি গড়ে তোলায় সাহায্য করেছিল।অর্থনীতিবিদ’রাই এটা সম্ভব করেছিল যার কারণে এখন অ্যামাজন ও অন্যান্য অনলাইন খুচরা ব্যবসায়ীরা আপনাদের অর্ডার করা সকল পণ্য কার্যকরীভাবে এবং শীঘ্রই,সপ্তাহে ৭ দিন,এবং দিনে ২৪ ঘন্টাই আপনাদের দরজায় দরজায় পৌছে দেয় ।অর্থনীতিবিদ’রাই অনলাইন বিজ্ঞাপণের এবং বিশেষ করে অনলাইন নিলামের আধুনিক কাঠামো দিয়েছিল।অর্থনীতিবিদ’রাই সম্ভব করেছিল যার কারণে আপনারা এখন ৫ তারকা হোটেল গুলোর রুম ৩ তারকা হোটেল রুমের মূল্যে পান।অর্থনীতিবিদ’রা এটাও সম্ভব করেছিল যার কারণে আপনারা এখন অনলাইনে ডেট খুঁজে পান এবং কেউ কেউ তাদের জীবনসঙ্গীও খুঁজে পান।
আমি মনে করি কিছুটা সম্মান অর্থনীতিবিদ’দের প্রাপ্য।
আপনাদের এই করতালিই আমার এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলো।তাই নয় কি?
সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ।“
অনুবাদকঃ শুভ হাসান
স্নাতক, ২য় বর্ষ,
অর্থনীতি বিভাগ,
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের ইমেইল এড্রেসঃpustecoclub@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.