Economic Depression (Part 1)

ইকোনমিক ডিপ্রেশন (১ম পর্ব)

ডিপ্রেশন! এই শব্দটার সাথে আমরা সবাই বেশ পরিচিত। আমি, আপনি আমরা সবাই মোটামুটি ডিপ্রেশনে থাকি কোন না কোন বিষয় নিয়ে। আর সেই ডিপ্রেশন কাটানোর জন্য আমরা কত কিছুই না করে থাকি।

কিন্তু অর্থনীতিতে আবার ডিপ্রেশন কি করে হয়? বিষয়টা হাস্যকর লাগছে পাঠক? হাস্যকর লাগলেও বিষয়টা কিন্তু সত্যি।  ডিপ্রেশন এমন এক আকাল যে অর্থনীতিকেও ছাড় দেয় না।

ব্যক্তিগত জীবনের ডিপ্রেশন আর অর্থনৈতিক ডিপ্রেশনের সংঙ্গা কিন্তু এক নয় পাঠক। তাহলে চলুন অর্থনৈতিক ডিপ্রেশন সম্পর্কে  আলোচনা করা যাক।

নাহ! আলোচনার আগে আমরা বরং একটু গল্প করি। গল্পে গল্পেই ইকোনমিক ডিপ্রেশন আলোচনা হবে।

রাহাত সবে মাত্র মাস্টার্স শেষ করে চাকরীর পরীক্ষা দিয়েছে। ভাগ্যক্রমে প্রথম চান্সেই ওর বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি হয়ে গেল। সকলেই খুশি এ খবর শুনে। এদিকে রাহাতের বান্ধবী ও মহাখুশি।  খুশিতে রাহাতের বান্ধবী ও ট্রিট চাইলো রাহাতের কাছে। বান্ধবীর আবদার বলে কথা। যে কোন মূল্যেই হোক রাখতে হবে, না হলে তো দফা রফা হয়ে যাবে।

যাইহোক, সে এখনও জয়েন করে নি চাকরিতে।  এদিকে পকেটও ফাঁকা। সে জয়েন করার ১ মাস পর তো বেতনটা হাতে পাবে। তো এখন কি করে সে ট্রিট দিবে! সে হিসেব করা শুরু করলো। মাসের শেষে বেতনের পর বাসা ভাড়া,  খাওয়া দাওয়া, বাবার ঔষধ, বোনের স্কুলের টাকার পর হাতে মোটামুটি ৩ হাজার টাকার মত থাকবে। এ টাকায় তার বান্ধবীর ট্রিট হয়ে যাবে। অতএব, সে অন্য বন্ধুর থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে বান্ধবী কে ট্রিট দিলো।

যেদিন সে জয়েন করতে যাবে ঐদিন সে গাড়ী এক্সিডেন্ট করলো। ব্যস! ১ মাসের জন্য হাসপাতালে পরে রইলো। এদিকে তার চাকরিতে জয়েনিং ও হয় নি। অন্যদিকে বন্ধুর থেকে ধার করা টাকা ফেরত দিতে হবে, বোনের স্কুলের টাকা বাকী,  বাবার ঔষধের দোকানে বাকী,  মুদি দোকানে বাকী,  বাড়ি ভাড়ার টাকা বাকী,  আর হাসপাতালে ১ মাসে তার যে টাকা বিল হয়েছে তা তার ৩ মাসের বেতনের সমান।
আর জয়েনিং না হওয়াতে বেতনের টাকাটাও পায় নি।  সব মিলিয়ে একটা যাচ্ছে তাই অবস্থা।
এখন সে কি করবে? তার কাছে মাত্র দুটো রাস্তা খোলা আছে এখন। প্রথমত, আবার ধার দেনা করে সব পরিশোধ করে চাকরিতে জয়েন করে আস্তে আস্তে ঘুরে দারানো, দ্বিতীয়ত এখন কেউ যদি রাহাতের পাশে দাঁড়ায় এবং এসব চাপ জনিত কারণে সাপোর্ট দেয় তবেই সে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

চলুন পাঠক এবার মূল আলোচনায় ফেরা যাক। যদি আমরা সহজ ভাষায় বলতে যাই তবে রাহাতের এক্সিডেন্ট হওয়ার পর তার যে অবস্থা  সেটাই মূলত অর্থনৈতিক ডিপ্রেশন।  এবং রাহাতকে সাপোর্ট দেয়ার যে বিষয়টা সেটাই মূলত অর্থনীতির মন্দার অবস্থায় গভর্মেন্ট সাপোর্ট বলে।
আর বইয়ের ভাষায় বলতে গেলে, দীর্ঘ সময় ধরে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ধীরগতি অথবা এর বাণিজ্যিক আবর্তনের সংকোচনই হলো ইকোনমিক ডিপ্রেশন বা অর্থনৈতিক মন্দা।
আশাকরি আপনার বুঝতে পেরেছেন ইকোনমিক ডিপ্রেশন জিনিষটা কি।

পাঠক এবার আমরা একটু আমেরিকার দিকে খেয়াল করি। পুরো পৃথিবীতে আমেরিকানরা  পাগলাটে জাতি হিসেবে পরিচিত।  ওরা সারা বছরই ঋণে জর্জরিত থাকে। এই ধরুণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে নতুন একটা গাড়ি কিনে। তারপর এক বছর ধরে সেই ঋণ শোধ করে। ঋণ শোধ হবার পর সেই গাড়িটিকেও ফেলে দেয়। আবার নতুন করে ঋণ নিয়ে আবার গাড়ি কিনে। ঠিক এরকমই একটা কারণে আবাসন ঋণ বা আবাসন খাতের জন্য ২০০৭ সাল নাগাদ আমেরিকা একটা অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পরে। তারও আগে ১৯২৯ সালের দিকে পুরো বিশ্ব একটা মহামন্দা বা গ্রেট ডিপ্রেশনে পরে।

আমরা আরেকটা লেখায় ২০০৭ সালে আমেরিকার ডিপ্রেশন ও ১৯২৯ সালের গ্রেট ডিপ্রেশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে করতে পারেন। আমারা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো রিপ্লাই দিয়ে অথবা আরেকটি লেখা পোষ্ট করে আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে।
সবাই ভাল থাকুন,  সুস্থ থাকুন আর আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ সবাই কে।

লেখক
মোঃ রাশেদুল ইসলাম
অর্থনীতি বিভাগ
স্নাতক ২য় বর্ষ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

1 comment:

  1. ভালো লেখা। চালিয়ে যাও ভাই।

    ReplyDelete

Powered by Blogger.