হিসাববিজ্ঞান পরিচিত ও নীতিমালা
হিসাববিজ্ঞান কথাটা শুনলেই কেমন মনে হয় যেন হিসাব নিকাশ এর ব্যপার। হুম ঠিক তাই। হিসাববিজ্ঞান এর ধারনা সর্বপ্রথম নিয়ে আসেন লুকা প্যাসিওলি ১৪৯৪ সালে তার লেখা সুম্মা ডি এরিথমেটিকা, জিওমেটরিয়া,প্রোপোরশনে এট প্রপোরশন্যালিটে বইটি প্রথম প্রকাশ পায় ইতালীয় ভাষায়।
মূলত বইটি ছিলো গনিতের উপর লিখিত ৫ টি অংশে বিভক্ত। এই বইটিতেই হিসাববিজ্ঞান এর বেশ কিছু প্রসেস সহজ করে দেখানো হয়।
যেমন ধরুন আপনার কাছে ২০ টাকা আছে সেখান থেকে আপনি ১২ টাকা খরচ করে এক টা কোক কিনলেন তাহলে আপনার কাছে আর কত টাকা রইলো? ২০-১২=৮ টাকা তাই তো।
এভাবে আমরা ছোট ক্লাস গুলোতে বিভিন্ন অংক করেছি। কিন্তু আমরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ও যদি এভাবে হিসাব রাখি তাহলে প্রতিষ্ঠানে আয় ব্যয় হবে কিনা তা পরীক্ষা করা তুলনামূলক কঠিন তাই আমরা দুইতরফা দাখিলা পদ্ধতি ব্যবহার করি। যেই পদ্ধতি লুকা প্যাসিওলি আবিষ্কার করেন।
দুইতরফা দাখিলা হলো একটা পদ্ধতি যেখানে 2 টা পক্ষ থাকে যাদের একটি লেনদেন প্রভাবিত করে উভয় পক্ষকেই। নিচে একটি নমুনা দেয়া হলো।
যেমন ধরুন আপনি নগদ টাকা দিয়ে একটি বাড়ি কিনলেন। তাহলে আপনার নগদ টাকা সম্পদ চলে গেলো ও একটি বাড়ি সম্পদ হিসেবে বাড়লো।
হিসাববিজ্ঞান শেখার আগে জানতে হবে হিসাববিজ্ঞান জিনিস টা কি। হিসাব বিজ্ঞান হলো একটি তথ্য ব্যবস্থা যার কাজ হলো আর্থিক ঘটনা চিহ্নিত করা মানে যেই লেনদেন(কোনো কিছুর বিনিময়ে অন্যকিছু গ্রহন করা অনেকটা বিনিময় প্রথার মত) অর্থের মাপকাঠি তে পরিমাপ করা যায়।
যেমন আমি ১০০ টাকা দিয়ে একটি বই কিনলাম।
শুধু আর্থিক ঘটনা চিহ্নিত/শনাক্ত করলেই শেষ নয়। এখন আমাদের এই চিহ্নিত করা আর্থিক ঘটনা গুলো লিপিবদ্ধ বা লিখিত একটা প্রমান রাখা লাগবে এবং তা নানারকম ভাবে প্রসেস বা প্রয়োজন অনুযায়ী সাজিয়ে গুছিয়ে এই তথ্য ব্যবহারকারীদের প্রদান করতে হবে মাত্র।
সহজভাবে বলতে গেলে, হিসাববিজ্ঞান হচ্ছে একটি তথ্য ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি আর্থিক ঘটনা চিহ্নিত করে, লিপিবদ্ধ করে ও তা প্রসেসিং করে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের নিকট তথ্য সরবরাহ করা।
আমরা খেয়াল করলেই এখানে দেখতে পাচ্ছি যে যে ৩ টি আলাদা আলাদা প্রক্রিয়া রয়েছে।
i) লেনদেন চিহ্নিত করা - অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ যোগ্য কোনো ঘটনা ই শুধু এখানে ব্যবহার হবে,তাছাড়া নয়। যেমন আমি যদি একটি কম্পিউটার কেনার প্রস্তুতি নেই বা অর্ডার/ফরমায়েস করি তাহলে আমার কোনো টাকা চলে গেলো না তার মানে এখানে কোনো লেনদেন হয়নি। কিন্তু আমি যদি ৫ টাকার একটি কলম ও ক্রয় করি আমার ব্যবসায় এর জন্য তাহলে এটাই লেনদেন। এগুলোই শুধু আমাদের কাজে লাগবে।
ii) লেনদেন লিপিবদ্ধ করা - লিপিবদ্ধ করার আগে লেনদেন চিনতে/বিশ্লেষণ করতে হবে যে এটা কি ধরনের লেনদেন(এটা আমি একটু পরে বোঝাচ্ছি)। এটা আমরা অনেক সময় হিসাব সমীকরণ এর মাধ্যমে ও করে থাকি। এরপর আমাদের কাজ হলো লেনদেন গুলো জাবেদাভুক্তকরণ/জাবেদা/জার্নাল হিসাবে লিপিবদ্ধ করা।
এ পর্যায়ে শেষ কাজ হলো জাবেদা থেকে নানান দিকে তথ্য স্থানান্তর করা এবং সামগ্রিক একটি হিসাবনিকাশ করা।
এই লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ এর অপর নাম হিসাবরক্ষণ প্রক্রিয়া ও বলা হয়।
iii) ব্যবহারকারীদের নিকট তথ্য সরবরাহ করা - এই তথ্য তাদেরকেই প্রদান করতে হবে যাদের কাজে লাগবে।
এক্ষেত্রে আমরা ব্যবহারকারীগণ কে 2 ভাগে ভাগ করবো
১. অভ্যন্তরীণ - ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান এর অভ্যন্তরীণ যারা এই তথ্য থেকে জ্ঞান নিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা, আদেশ ও পরিচালনা করে। যেমন
1.ব্যবস্থাপকগণ(Managers),
2.উৎপাদন পরিদর্শকগণ(Production Supervisors),
3.অর্থ পরিচালকগণ(Finance Directors),
4.কোম্পানির কর্মকর্তাগণক(Company Officers)
২. বহিঃস্থ - কোনো কোম্পানির তথ্য বইরের ব্যবহারকারীও ব্যবহার করে। যেমন
1. ঋণ প্রদানকারী
2. সরকার
3. NBR National Board of Revenue
4. ব্যাংকার
5. নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্টান
6. গবেষকগণ
7. নিরীক্ষকগণ
হিসাববিজ্ঞান এর নীতিমালা
#আর্থিক মুল্যের একক ধারণা
এই ধারণা অনুসারে, যে সকল ঘটনা অর্থের মূল্যে পরিমাপ করা যায় শুধুমাত্র সেগুলো হিসাব বইতে লিখা হবে। যেমন: উত্তরবঙ্গে এবারের বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু তা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায় না বিধায় তা লেনদেন নয়।
# চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা
এই ধারণা অনুসারে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে থাকবে। তাই বছর শেষে সম্পত্তি বিক্রয় না করে এবং দায় ও মালিকানা স্বত্ব পরিশোধ না করে উদ্বৃত্ত পত্র প্রস্তুত করা হয়।
এই ধারণা অনুসারে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে থাকবে। তাই বছর শেষে সম্পত্তি বিক্রয় না করে এবং দায় ও মালিকানা স্বত্ব পরিশোধ না করে উদ্বৃত্ত পত্র প্রস্তুত করা হয়।
→ সম্পত্তি ও দায়কে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
→ ব্যয়কে মুনাফা ও মূলধনজাতীয় এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর লাভ/ক্ষতি নির্ণয় করতে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চলমান জীবনকে কতগুলো কৃত্রিম সময়কালে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলোকে হিসাবকাল বলে।
→ হিসাবকাল সাধারণত ১মাস, ৩মাস, ৬মাস বা ১ বছর হতে পারে।
No comments